শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ১০:৪১ অপরাহ্ন
আবু ইউসুফ স্টাফ রিপোর্টার
নাটোর:
নাটোরের বাগাতিপাড়ায় নানা কৌশল আর বুদ্ধিমত্তার সাথে দিনরাত পরিশ্রম করে যে প্রশাসন সমস্ত অপরাধীদের আইনের আওতায় শাস্তি নিশ্চিত করে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্থিতিশীল রাখেন, এবার সেই প্রশাসনকে মিথ্যা তথ্যে ধোকা দিয়ে তিনটি ধর্ণনচেষ্টার অপরাধীকে বাঁচানোর অভিযোগ পাওয়া গেছে।
ভুক্তভোগীদের দাবী, লিখিত অভিযোগ দেয়ার পরও তাতে গুরুত্ব দেয়নি পুলিশ। তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন ও তদন্ত ছাড়াই অপরাধীপক্ষের কথা সরল বিশ্বাস করেছেন। আর এর মাধ্যমে অপরাধীকে আইনের আওতায় না আনার বোকামীতে প্রশাসনের ওপর ক্ষুব্ধ হয়েছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, মাতবর, ভুক্তভোগী পরিবার ও এলাকাবাসী। বাগাতিপাড়া পৌর এলাকার মাছিমপুর মহল্লায় এই ঘটনা ঘটে।
মাছিমপুর মহল্লার বিপুল সরকার শুভ জানান, প্রতিবেশী আকরাম স্থানীয় মাছিমপুর প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পদাধীকার বলে ওই বিদ্যালয়ের পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি হওয়ায় ইউএনওসহ উপজেলা প্রশাসনের সাথে তার ভালো যোগাযোগ৷ একই বিদ্যালয়ের নৈশপ্রহরী হিসেবে দায়িত্বপালন করছেন আকরামের অপর ভাই। বেশ কিছুদিন আগে ওই নৈশপ্রহরীর মেয়ের সাথে তার সম্পর্ক গড়ে ওঠার কথা জানতে পেরে ক্ষুব্ধ হন আকরাম ও তার পরিবারের সদস্যরা। এক পর্যায়ে ইউএনওকে আকরাম বলে, ‘তার ভাস্তিকে আমি উত্যক্ত্য করি’। এতে থানা থেকে পুলিশ এসে তার খোঁজ করতে থাকায় প্রাণভয়ে আর গ্রেপ্তার এড়াতে তিনি এলাকাত্যাগ করেন। প্রায় ছয়মাস পর তিনি বাড়িতে আসেন। এলাকায় ফিরে জানতে পারেন, আকরামের ভাগ্নে তথা লুৎফরের ছেলে রাদিত হাসান রাব্বির স্বভাব খারাপ হওয়ায় ইতোমধ্যেই দুই-তিনটি স্কুল পরিবর্তন করে বর্তমানে বাগাতিপাড়া সরকারি পাইলট মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ে ৮ ম শ্রেণীতে পড়লেও তার প্রকৃত বয়স প্রায় ১৭-১৮ বছর। এরই মধ্যে সে একই এলাকার দুইটি মেয়েকে ধর্ষণ চেষ্টা করেছে। এরমধ্যে একটি মেয়ে এই এলাকা ছেড়ে সিরাজগঞ্জে পড়ালেখা করছে। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, গত শুক্রবার দুপুরে বাগাতিপাড়া বালিকা বিদ্যালয়ে ৬ষ্ঠ শ্রণীতে পড়ুয়া তার ভাগ্নিকে বাড়িতে রেখে তিনি বাইরে যান৷ বাড়িতে কেউ না থাকায় তার ভাগ্নি বাইড়ে থেকে ফিরে ঘরের দরজা আটকিয়ে চৌকিতে শুতে যায়। কিন্তু এরই মধ্যে রাব্বি গোপনে ওই চৌকির নীচে লুকিয়ে থাকলেও তার ভাগ্নি খেয়াল করেনি। চৌকিতে শোয়ামাত্র রাব্বি বের হয়ে তার ভাগ্নিকে ধর্ষণচেষ্টা করতে থাকে। ভাগ্নির চিৎকারে এলাকাবাসীর পাশাপাশি তিনিও পৌছে ঘরের দরজার খিলভেঙ্গে শঙ্কিত ভাগ্নিকে উদ্ধার ও রাব্বিকে আটক করেন৷ খবর পেয়ে আকরামরা ছুটে এসে ধারালো হাসুয়া, ধরে রাব্বিকে ছিনিয়ে নিয়ে যায়। এঘটনায় ওইদিনই তিনি থানায় লিখিত অভিযোগ দেন। পরে স্থানীয় কাউন্সিলর ও মাতবররা গ্রাম্যশালিসে স্বাক্ষ্যপ্রমাণ ও অপরাধীর স্বীকারোক্তি পেয়ে শাস্তি ঘোষণা করতে উদ্যত হলে মাতবর মুক্তার হোসেনকে মারপিট করে আকরামের ভাই জাহেদ ও রাব্বি। এরপর তারা পুলিশকে বলে যে, নৈশপ্রহরীর মেয়েকে উত্যক্ত্য করার শাস্তির প্রতিশোধ নিতেই এমন নাটক সাজানো হয়েছে। প্রশাসনও আকরামদের কথা সরল বিশ্বাস করে। এতে ধর্ষণচেষ্টা ও মাতবরকে মারপিটের অপরাধ স্বত্বেও অপরাধী কোনরুপ শাস্তি পাওয়া থেকে রেহাই পায়। এব্যাপারে আকরাম অভিযোগ অস্বীকার করে জানান, মেয়ের বাড়ি থেকে কথা বলার জন্য রাব্বির ফোন নেয়। ওই সময় পাশে বন্ধুর বাড়ি হয়ে রাব্বি ফোন নিয়ে ফেরার পথে আগের ঘটনার প্রতিশোধ নিতে শুভ তার ভাগ্নেকে বারান্দা থেকে ঘরে আটকায়। ঘরে ওই সময় মেয়েটা ছিলনা। আর গ্রাম্যশালিসে তার ভাগ্নেকে অন্য মানুষ শাসন করবে এমন সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ নিয়ে মুক্তারের সাথে সামান্য গন্ডগোল হয়। বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাইলে ইউএনও প্রিয়াঙ্কা দেবী পাল জানান, বিষয়টি তদন্ত করতে তিনি ওসিকে নির্দেশ দিলে তিনি(ওসি) পরে জানিয়েছেন, আগের ঘটনার প্রতিশোধ নিতে শুভ এমন নাটক সাজিয়েছে বলে তারা জানতে পেরেছেন। বাগাতিপাড়া থানার ওসি নাজমূল হক জানান,তদন্তে ঘটনার সত্যতা পাওয়া যায়নি। তবে ঘটনা তদন্তের দাবীদার এসআই তারেক জানান, তিনি বিভিন্নভাবে খোঁজ নিয়েছেন। এব্যাপারে ভুক্তভোগী মাতব্বর মুক্তার হোসেন জানান, গ্রাম্যশালিসে অভিযুক্ত রাব্বি প্রকাশ্যে ধর্ষণচেষ্টার কথা স্বীকার করেছে৷ এরপর ৬ জনের জুড়িবোর্ড রাব্বিকে ২৫ বেত্রাঘাতের সিদ্ধান্ত আলোচনা করছিল। পাশে থেকে এসব কথা শুনতে পেয়ে জাহেদ ও রাব্বি ঘটনাস্থলে পৌছে। এক পর্যায়ে, তাকে আক্রমণ করে মারপিট শেষে তার জামাও ছিঁড়ে দেয়। বিষয়টি পুলিশকে জানানোর পরও কোন ব্যাবস্থা না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি। বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাইলে স্থানীয় কাউন্সিলর আব্দুল হক জানান, রাব্বি ৮ ম শ্রেণীতে পড়লেও তার বয়স বেশী আর স্বভাব খারাপ। এর আগেও আরো দুইটি মেয়ের একই ধরণের অভিযোগ প্রমাণ হওয়ায়, তিনি রাব্বির বিচার করেছেন দাবী করে বলেন, গ্রাম্যশালিসে রাব্বির অপরাধ প্রকাশ্যে প্রমাণই শুধু নয়, সে ধর্ষণচেষ্টার কথা স্বীকারও করেছে। এরবাইরেও একজন মাতবরকে প্রকাশ্যে মারপিট করেছে তারা। অথচ অপরাধ প্রমাণ ও স্বীকার করা স্বত্বেও শুভর আগের ঘটনার প্রতিশোধ হিসেবে এই ঘটনাকে তুলে ধরে আকরামরা শুধু চৌকশ প্রশাসনকে বোকা বানিয়ে ছাড়েনি বরং রাব্বির অপরাধের বিচার না করে আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি ও তাকে আরো অপরাধ করতে উৎসাহিত করেছে যার প্রভাবে এলাকার আরো অনেক মেয়েই ভবিষ্যতে রাব্বির শিকার হতে পারে। প্রশাসনের এমন ভূমিকায় ওই এলাকায় স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও মাতবরদের সম্মান ক্ষুন্ন আর অপরাধীর সাহসই বৃদ্ধি হয়নি বরং প্রশাসন সম্পর্কে মানুষের মনে ক্ষোভ ও নিরপেক্ষতা, নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। এমন হীন অপরাধ যাতে রাব্বি বা অন্যকেউ করতে না পারে সেজন্য সকল প্রকার সরল বিশ্বাস, ধোকা ও প্রভাবমুক্ত থেকে ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে অপরাধ দমনে প্রশাসন ও সরকারের আশু পদক্ষেপ কামনা করেন তিনি।
All rights reserved © 2020-2024 dainikparibarton.com
অনুমতি ব্যতিত এই সাইটের কোনো কিছু কপি করা কপিরাইট আইনে দণ্ডনীয়।